জিরো বাউন্ডারি কবিতার চতুর্থ সংখ্যার জন্য লেখা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট মার্চ মাসের ১০ তারিখ। দুটো কবিতা বা কবিতা বিষয়ক লেখা নিজের এক কপি ছবি সমেত পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেলে-0boundarykabita17@gmail.com

Saturday 10 February 2018

প্রচ্ছদ



আফজল আলি







চলে গেলেন রবিশংকর বল ,  বিকাশ কুমার সরকার,   সুপ্রভাত রায় , মণীন্দ্র গুপ্ত । এঁদের চলে যাওয়া আমাদের তথা বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি । দুই ইন্দ্রপতন । দুই সম্ভাবনার অঙ্কুর বিদায় । তবুও আমরা বাঁক নিয়ে চলছি হৃদয় ভারাক্রান্ত হলেও । আবছা অন্ধকারে আলো জ্বালি আবার। শান্তি কামনা করি এঁদের বিদেহী আত্মার । ঈশ্বর মহান। 

জিরো বাউন্ডারি ছোট ছোট পায়ে হাঁটছে । তিন সংখ্যায় পড়ল। আমাদের প্রতিযোগিতা নেই,   পরাক্রম নেই  ;  একটু আনন্দ হয়তো আছে । একটু আনন্দের জন্য ই চলা। সঙ্গে আমাদের কিছু কথা আমরা বলি। অহংকারের মূলে উইপোকা থাকে বলে আমরা তা পরিহার করি।কারণ যে দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে আমাদের চলা শুরু সেখানে অহংকার ছেঁটে বাদ দেওয়া হয়েছে।এবং প্রতিযোগিতা ও । সাহিত্যে প্রথম হওয়ার দৌড় কিছু নেই  ,  হয় না । পুরস্কার বা সম্মান এগুলো একটু উত্সাহ দেওয়া বা কিছুটা স্বীকৃতি । কোথাও ঢিল না ছুঁড়ে বা পাটকেল না মেরে নিজেদের কথা বলি ,  নিজেদের মতো চলি । ছোট থেকেই শুরু হয় বড়ো হওয়া ।

তবে জিরো বাউন্ডারি আসার আগে বাংলা কবিতার যা দশা দিশা ছিল  ,  জিবাক আসার পরে তা বেশ পাল্টেছে । হিমঘরে ঘুমিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রকল্প পুনরায় জেগে উঠেছে । এটা বেশ  ভালো লক্ষ্মণ ।বিভিন্ন ব্যক্তিকবি বা গ্রুপ মুক্তির মর্ম বুঝতে পেরে নতুন উদ্যমে শুরু করেছে এবং জিরো বাউন্ডারিকে অনর্থক প্রতিযোগী ভেবে নিয়ে । আমরা নজরদারিতে বিশ্বাসী নই ,  পর্যবক্ষেণে আছি। তবু বাংলা কবিতায় জিরো বাউন্ডারি নতুন করে উন্মাদনা আনতে পেরেছে সরাসরি বা পরোক্ষে এটা কম তো নয়।

জিবাক কবিতার বহুধর্মীতার কথা বলে ,  আবার কবিতার অন্তর্বর্তী বহুরৈখিকতা বা মুক্তগামীতার কথা বলে। কেন্দ্রের কথা বলে আবার প্রান্তিকের কথা বলে।আবার সব বাধা সীমানা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে । কবিতা এগিয়ে যাবেই । তরুণ কবিদের আমরা বুকে টেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত । তাদের ঘিলুতে তৈরি হোক হৃদয়ের পরিকল্পনা ।

কবিতা অসৎ এ নেই  ,  খারাপ এ নেই  ,  আন্দোলনে নেই এবং experiment এ ও থাকে না যখন তা লিখিত রূপ পায়। তার আগে পর্যন্ত কবিতার অনেক কিছু থাকতে পারে অদৃশ্য বৈভবে,  যা আকার বা প্রতিকৃতপ্রাপ্তি হয় না । মানুষ মনে মনে যা ইচ্ছা কল্পনা করতে পারে । ভালো মন্দ কু সু যা কিছু । কিন্তু বাস্তবে রূপ দেওয়া না হলে তা গ্রাহ্য নয় বা বিবেচিত হয় না । এটাই রীতি । কিন্তু ভালো চিন্তা ভালোর দিকে ফেলতে থাকে। কদর্য চিন্তা কুৎসিত দিকে ঠেলতে থাকে । কিন্তু প্রতিফলন ই বিচার্য । তাই একটি কবিতা লিখিত রূপ পাওয়ার আগে পর্যন্ত এগুলো বিচার্য হতে পারে   কিন্তু লিখিত রূপ পেলে তা কবিতা হয় । কবিতার বিভিন্ন প্রকার ভেদ থাকতে পারে,   নাম থাকতে পারে,  গুণগত ও বিষয়গত ধর্ম থাকতে পারে । কিন্তু কবিতা নিজে না চুরি করে,   খুন করে,   ধর্ষণ করে । তবে কবিতা আমাদের সু কৃতিতে সুড়সুড়ি দেয় ,  ভাবুক করে,   প্রাণিত করে । এ সব ই ভালো,   ভালোর দিকে ।

পৃথিবীর বা প্রকৃতির নিজস্ব একটি ধর্ম আছে  ;  সেই ধর্ম বা প্রক্রিয়া সামনে রেখে সে বিস্তারিত অবস্থায়িত। তা হল জিরো বাউন্ডারি ধর্ম। সে সামগ্রিকতাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় । কোনো কৃষি ভূখণ্ডে দাঁড়ালে আমরা যদি তাকিয়ে দেখি ,  দেখতে পাবো সবুজ প্রান্তর কেমন দিগন্তের দিকে চলে গেছে । সমস্ত ফসল এক হয়ে দাঁড়িয়ে ব্যক্তি মালিকানার ছোট ছোট আলগুলোকে ঢেকে দিয়েছে এবং সমস্ত ভূখণ্ড তো এক। শুধু ব্যক্তি মালিকানার স্বার্থে তা ভাগ করা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে । কিন্তু এগুলো সেভাবে বাউন্ডারি নয় যা মানুষের যাত্রাকে রুখে দিতে পারে । এই ধারণা বা দৃশ্য প্রায় সর্বক্ষেত্রেই। তাই universe জিরো বাউন্ডারি দর্শনে অধিষ্ঠিত । আমাদের জানার অজান্তেই এটা নির্ণিয়মান। তাই জিরো বাউন্ডারি দর্শনে কোনো কিছুকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী মনে করে না । কিন্তু সবকিছুকে গ্রাস করতে পারে  । যদি ধর্মে বাউন্ডারি না থাকে  ,  যদি সীমান্তে বাউন্ডারি না থাকে,   তাহলে তো শান্তি শান্তি । এবং পৃথিবী ইহাই চায়। মানুষ বা রাষ্ট্রনায়করা তা হতে দেয় না । জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট সেই জায়গায় ধাক্কা দিতে চায়। 

কবিতার প্রকৃত রূপরেখাকে ধরতে জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট । তরুণ কবিদের পথ দেখানোর জন্য সামগ্রিকতাকে নিয়ে । যাঁরা খণ্ডে খণ্ডে ছিল তাদের বাউন্ডারি আর থাকবে না । 

এই সংখ্যার কবিতাগুলো পড়ে পাঠক আরাম পাবেন এটুকু বলতে পারি। আমরা মগজে চিন্তাসূত্রের অনুঘটক হতে পারি। হাতুড়ি মারতে পারব না । এই সংখ্যায় থাকছে জিরো বাউন্ডারি গদ্য এবং এই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি কুমারেশ তেওয়ারীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন আর এক উল্লেখযোগ্য তরুণ কবি সুকান্ত ঘোষাল । 
সবাই ভালো থাকুন ,  কবিতা লিখুন এবং ভাবুন। 



রুমা ঢ্যাং অধিকারী



কিছু মানুষ আছেন যাদের চলে যাওয়া মন মেনে নিতে পারে না সে তাদের চিনি বা না চিনি সেরকমই দুজন বিকাশ কুমার সরকার,  সুপ্রভাত রায়।  এদের এই চলে যাওয়া মনে দাগ কেটে গেছে। তারা চলে গেছেন কিন্তু ফেলে গেছেন কিছু প্রশ্ন - আমাদের মান এবং হুঁশ নিয়ে,  আমাদের কর্তব্য নিয়ে। ২০১৭ আমাদের অনেক প্রতিভাবান কবির প্রাণ নিয়েছে যা নতুন বছরেও থেমে থাকেনি যেমন আমরা সদ্য হারিয়েছি মণীন্দ্র গুপ্তকে। সেই অভাব কোনদিন পূরণ হবে না তবুও কোন কিছু এই বিশ্বে থেমে থাকে না।  আমরা তাদের মনে করেই এগিয়ে যাব আগামীদিনে। 

সাহিত্য নিয়ে যারা চর্চা করেন তাদের কাছে বইমেলা একটা উৎসব। সকল উন্মাদনা, ব্যস্ততা ছিল এই মেলাকে ঘিরে যা মেলা শুরু হবার কয়েকদিন আগেই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।  আবার কয়েকদিনের আনন্দযাপনের পর খুব তাড়াতাড়ি যেন শেষও হয়ে গেল। এরই মধ্যে জিবাক ম্যাগাজিনের কাজ শেষ হয়েও শেষ হয় নি এমন গোছের পরিণত হয়েছিল। লেখক পাঠক কারোর ওপর চাপ না বাড়াতে কিছুদিন পিছিয়ে ম্যাগাজিন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কিন্তু মাথা তো আর চুপচাপ বসে থাকতে পারে না! ঠিক এমনসময়েই নতুন বিভাগের কথা মাথায় এল যেগুলো জিবাকের সহ-সম্পাদকযুগলের ওপর ন্যস্ত হল। তারাও খুব উৎসাহ নিয়ে লেখা শুরু করে দিল। আর এভাবেই দীর্ঘকবিতা, অনুকবিতা, মুক্তগদ্য, সাক্ষাতকার, বই রিভিউয়ের সাথে আর পালক যুক্ত হল -  জিরো বিতান বিভাগ। আশা করি এই বিভাগ সবার মন কাড়বে। আপনারা পড়ুন সকল বিভাগ আর আমাদের জানান আপনাদের ভাল লাগা মন্দ লাগা। আপনাদের মন্তব্যই আমাদের প্রাণিত করবে আগামী দিনে। 

 গত দুবারের সংখ্যার মত এবারেও প্রচুর কবিতা জিবাকের মেলে এসে জমা হয়েছিল।  সেখান থেকে পূর্বের মতই খুব বেছে এই সংখ্যা সাজান হয়েছে। যাদের কবিতা রাখা গেল না আমরা আশা করব একদিন তাদের কবিতা নিশ্চই মনোনীত হবে। ততদিন কবিতা পরিশীলনপর্ব চলুক।  এব্যাপারে আমাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুব এগিয়ে। আপনারা চাইলে যুক্ত হতে পারেন যেখানে কবি আফজল আলি ও আরও কিছু প্রতিভাবান কবি উপস্থিত থেকে পরিশীলিত করেন। 

শীত বিদায় নিচ্ছে - ' আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'।  বসন্তে আপনারা রঙিন হন - মন নেচে গেয়ে উঠুক কিন্তু শরীরের দিকে যত্নবান হয়ে। আর বেশি বেশি কবিতা পড়ুন ও পড়ান।  ভালো থাকুন অপরকেও ভালো রাখুন মান ও হুঁশ মুক্ত রেখে।